Posts

মাকড়সা

হুহু ফাঁকা সাদামারা দেওয়ালে  সরীসৃপের ফাঁপা, সর্বগ্রাসী গিলে খাওয়া অস্তিত্বকে অস্বীকার করে  নিজের লালা, শ্রম, শিল্প দিয়ে মাকড়সাটা গড়ে তুলেছিল একটা ঘর কারোর যাতায়াতের পথে বাধা সৃষ্টি করেনি সৃষ্টি করেছিল এক জালের উপনগরী পুরো ঘরটাই মানুষটার পুরো বাড়িটাই তার দেওয়ালের এক কোণ তবু মাকড়সাকে ছাড়তে পারল না সে তিলতিল করে গড়ে তোলা কারুকার্যময় জালিকাকে ঝুলঝাড়ুতে জড়িয়ে নিল মাকড়সাটা চুপচাপ চলে যাচ্ছিল তাকে ভ্যাকিউম দিয়ে টেনে নিল অথচ প্রত্যহ কত কুমির মানুষকে টেনে নিয়ে যায় তাদের কিছু করতে পারবে তুমি?  কুমির হাসে, সে শক্তিমান মাকড়সার গরীব বস্তি ওপড়ানোর জন্য কাউকে কৈফিয়ত দিতে হয় না...

মিয়াও

গ্যাঁট হয়ে বসে আছে হুলো রান্নাঘরে ফ্রিজের সামনে নিজের খাবারের বাটিটা আগলে কখন পেটটা একটু খালি হবে, আবার খাবে!  মাঝে মাঝে জুলজুল চোখে এদিক ওদিক দেখছে আমার ভিতরের বাচ্চা ছেলেটার বিল্লির গোল নাদুটা চটকানোর জন্য হাত নিশপিশ করছে বিল্লি বলছে, "মিয়াও!" কি? খাবার তো দেওয়াই আছে! "মিয়াও!" বিল্লি বলছে মিয়াও বিড়াল ভাষায় একটিই শব্দ, মিয়াও।  একটা অদরকারি কাগজ যেই মুড়ে ফেলেছি ঘরের কোণে ছুট্টে এসে হুলো গাপ করে ধরেছে ওটা নিয়ে বল খেলবে মোবাইল চার্জারের তারটা মাটিতে ঝুলছে তাই দেখে কামড়াকামড়ি শুরু করেছে "মিয়াও!" ওরে ওটা ছিঁড়ে যাবে রে!  "মিয়াও!" অন্য কিছু নে আহ! ওখানে উঠিস না, সব পড়ে যাবে যে! "মিয়াও!" বিল্লি বলছে মিয়াও বিড়াল ভাষায় একটিই শব্দ, মিয়াও। 

ভূতের সাথে আড্ডা

বাইরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। দিন দুয়েক ধরে হচ্ছে এরকম, বর্ষা এসে গেল বলে। বর্ষার সাথে সাথে আমার মধ্যে বাঙালিয়ানার বহর বেড়েছে হঠাৎ। কয়েক দিন ধরেই খুব ইচ্ছে করছে এরকম একটা দুর্যোগময় সন্ধ্যায় (এখন দুপুর) একটা ভূতের গল্পের আড্ডা দেব বন্ধুদের সাথে। এইরকম আড্ডা আজকাল বিরল হয়ে গেছে, বিশেষত এই টেকনো-হাব নিউ টাউনে কোথাও এইরকম খাস বাঙালি আড্ডা হয় কিনা আনার জানা নেই। বড় বেশি যান্ত্রিক এই অফিস পাড়াময় নিউ টাউন। হিউম্যান টাচটা পাই না। তার উপরে এখন নিউ টাউনের যেখানে থাকি, সেটা একেবারেই কলকাতার শেষপ্রান্ত।  যাকগে, একলা চলো রে! ঠিক করে ফেললাম আজ বন্ধুদের কে ডেকে নিয়ে আড্ডা দেবই। আমি নিজের ফ্ল্যাটে একা থাকি, বাবা মা গত হয়েছেন বেশ কিছু বছর হলো আর আমি বিয়ে করিনি। অতএব কেউ মদ খেয়ে রাতে থাকতে চাইলেও অসুবিধা নেই। অন্যান্য দিন রান্নাবান্না করে খেয়ে দেয়ে লাইব্রেরী যাই লেখালিখি করতে। কিছু পত্রপত্রিকায় লেখালিখি করে আর অন্য লেখকদের বই অনুবাদ করে আমার সংসার চলে। সংসার মানে আমি আর আমার কুকুর, শান্তিগোপাল। হ্যাঁ, কুকুরের নাম রেখেছি শান্তিগোপাল। আজ লাইব্রেরি যাওয়া ক্যান্সেল করলাম। মুদির দোকানে কিছু সরঞ্জামাদি বলে দিলাম ফ

বাবা

খালি দিতে এসেছিলে এ জীবনে তাই চাওয়া কি শেখায়নি বিধাতা মনে পড়ে যায় শৈশবের বাগানে তোমার আমার আর লাকির খেলা।  আজ তুমি একা শীত শেষের হাওয়ায় ভাসে স্মৃতির ছেঁড়া পাতা সব দিয়েও মানুষ ফুরিয়ে যায় না তাই আজও সবার জন্য সব আনিয়ে দেওয়ার তাড়া।  অসৎ চিন্তা এলে মাথায় ভেসে আসে তোমার রাগী মুখটা হতাশ হলে বাজে মাথায়, তোমার "লড়ে যা" বিপ্লব আর সংসারের জাঁতাকলকে ব্যালান্স করার খেলা জীবন আমিও ট্রাপিজে চড়ি টলমল পায়ে...

বসুন্ধরা

দূর থেকে পুলিশের সাইরেনের আওয়াজ শুনে বুকটা ছ্যাঁৎ করে ওঠে আবারও আমাকেই ধরতে আসছে নাকি? না না কেন আসবে চার কুড়ি পার হয়ে গেল বন্ধুরা, কমরেডরা সময় করে সব কেটে পড়েছিল ভালো চাকরি, ব্যবসা করতে ঘরসংসারের টানে রেগুলার রাতে সেক্স, দিনভর মেকি ঝগড়া ন্যাকামি আমিই আজও হলদেটে পুরনো বইয়ের পাতায় বদলের স্বপ্ন দেখছি গা গোলায় মাঝে মাঝে নারীর যোনির গন্ধে ঘেন্না হয় এত অন্যায়, তবুও তুমি প্রসূতি? এত শত দর্শনের মাঝে মাঝে ঝরঝরে বাতাস এনে দেয় পিওর ছাগলামির বসন্ত উৎসব আহা! ছাগলারাই আনন্দে আছে পিঠে রং মেখে... আবার সাইরেন বেজে ওঠে হঠাৎ যদি কোন পুরনো লাফড়ার জন্য শালা কেস খাই? হলদেটে বইয়ের পাতায় ঢুকে থাকি...

প্রথম আলো

মনে হয় যুগ যুগ যুগ ধরে কত জন্ম মরে আমি ফেলে এসেছি তোমায়... কালের বন্ধন ছিঁড়ে জীবনের ঋণ জুড়ে আমি খুঁজেছি তোমায়। হৃদয়ে স্পন্দন হয়ে জেগে আছো  না পাওয়ার ছাতিফাটা জ্বালা এ জীবন হেসে খেলে চালিয়েছি তবু আমি একদিন তোমায় ফিরে পাবো বলে... না সে প্রেম ছিল না, মোহ মাত্র বলে কাটিয়ে দিয়েছি সংসারের গারদ ভিজে ন্যাকড়া দিয়ে মুছে পরিস্কার করেছি কারণ এ ছেড়ে আমার ঘর কই? এ ঘরে তুমি নেই প্রিয়তমা প্রথম আলো যেমন নিশাচরের ভাগ্যে নেই  সেই প্রথম আলোর মত তুমিও আমার ভাগ্যে নেই... দুরস্তের সকালে মাঝে মাঝে ওপারের ডাক আসে যেন দেখি সবুজ জঙ্গলের স্বপ্ন আফ্রিকার আদিবাসী হাস্যমুখে আমাকে করে আবার স্বাগত আমার প্রথম মনুষ্য জন্মে এক বৃষ্টিভেজা বিকেলে এভাবেই মিলিয়ে যাবো অন্য ঠিকানায়।  প্রিয়তমা আমার ভাগ্যে তুমি নেই তাই আমাকে জ্যোতিষী বললেন একাই থাকলাম তাই তোমার প্রতিক্ষায় জানতাম, কিন্তু মানতাম না যা হবার তা হবেই তবু যদি না হয়? একলা মরিতে ভয় নাই আছে কেবল রাশি রাশি হতাশা মহাকাশীয় পরিহাসের পালা সেখানে সময় ততটাই অসহায়, যতটা সময়ের কাছে আমি কোটি কোটি তারা আর লক্ষ লক্ষ সৌরজগতের সীমানায় আমি খুঁজেছি শুধু তোমায় যুগ যুগ যুগ ধরে কত জন্ম মরে

নিচুজাত

আমরা মানুষ, তবে ওরা বেশি মানুষ ওরাই সত্যিকারের মানুষ ওরা আমাদের মুখে মুতে দিয়ে যায় আমাদের ঘরকে ওরা বস্তি বলে আমাদের ঘরের সামনে ওরা হেগেমুতে মাটি উর্বর করে দিয়ে যায় সেই উর্বর মাটিতে ফসল কিছুই হয় না আমার ছেলেটা খেতে পায় না আমার মেয়েটাকে বেচে দিল সেদিন যে ক'টা পয়সা দিল,  তাতে দুটো মানুষ এক হপ্তাও দু বেলা নুন ভাত হয় নে কো তারপর আবার মুতে দিল আমরা মাটিতে শুইবসি ওদের মুত এসে মুখে ছিটলো তারপর সেই হেগেমুতে উর্বর করা মাটিতেই ভাত খেলাম রোজই খাই যেমন।  চকচকে কাঁচের মত কিসব যন্তর ওরা টিপতে টিপ্তে যায় ইস্মাটফোন না কি বলে খায় না মাখে, জানি নে কো আমরাও মানুষ, কিন্তু ওরা অনেক বেশি মানুষ ওরা আমাদের মুখে মুতে দিয়ে যায়।  ওদের গৃহদেবতার কল্যাণে ওদের সন্তান থাকে দুধেভাতে আমাদের গরীবের দেবতা নাই ওদের দুধভাত খাওয়া মোটা সন্তানের মুত দিয়ে আমাদের সন্তান থাকে মুতে ভাতে ওদের ভোট হয় বছর বছর ওদের নেতারা আমাদের মুখে মুতে দেওয়ার সুযোগ পায় ভোটের পর আবার মুতে দেয় বছর বছর ফিবছর এই চলে শুধু মুত আর মুত মুতের গন্ধে ভরপুর জীবন একে বেঁচে থাকা বলে না তাই বোধহয় ওরা আমাদের মানুষ মানুষ বললেও ঠিক মন থেকে মানুষ ভাবে না। আমরা ক